অন্ধকারেও যেন আলোর সন্ধান পাই

জীবনে সবথেকে বেশি সহ্য করেছি হিংসার গন্ধ। আজকাল তাই এই গন্ধ থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলি এক ঝটকায়। অবশ্য এটা আমার জন্মগত নয়, প্রাপ্তি। আমার মায়ের কাছ থেকে যা কিছু ভালো শিখেছি তার মধ্যে আমার কাছে এটাই অন্যতম।
আমার মা; যাঁর ঝোলা ছিল প্রায় শূন্য। ভালো শাড়ি গয়না আরাম আয়েশ কিছুই ছিল না। সুতি শাড়ি পরে মাকে আমি বিয়েবাড়িতে যেতে দেখেছি। সবকিছুর পরেও আমার মা ছিলেন অনন্যা। না, আমি বলছি না। শৈশব থেকেই আমার মাকে ঘিরে ছিল সম্মান আর শ্রদ্ধা। সূত্র ছিল আমার বাবা অবশ্যই। আর ছিল আমার মায়ের জীবনবোধ এবং মূল্যবোধ। সেটা দেখেছি। প্রচন্ড অভাবেও কখনো মা-কে ঈর্ষান্বিত হতে দেখিনি কারোর প্রতি।
সেটার মারাত্মক প্রতিফলন আমার মধ্যে হয়েছে। আমার মেয়েবেলায় হয়তো দুই একবার অন্যের সুখ খেলনা আনন্দ জামা দেখে আমার কষ্ট হয়েছিল। কিন্তু বড়োবেলায় তো সব ফুরিয়েছে। কতবার নিজের জায়গা জিনিস ত্যাগ করেছি তার কোনো হিসাব আজ আর নেই আমার কাছে। যে সংসার যে মানুষজনকে নিজের বলে মেনে নিয়েছিলাম কোনো একদিন সেখানেও দেখলাম একমাথা সমান গর্ত। শুধু ডুবে যাওয়া অতল গভীরে। তারপরেও হিংসে হয়নি, ঈর্ষা হয়নি এই ভেবে যে ভোগী শুধু জানে ভোগ,কার ত্যাগের ফলে এই সিংহাসন দখল! দুঃখ হয়েছে আপশোশ হয়েছে খুব। তখন নীরবে মায়ের কথা মনে করতাম শুধু। কিছুটা স্বস্তি পেতাম।
আজকাল মানুষের মনে দুর্নীতি চলে শুধু। হিংসার দুর্নীতি। মনে চলে সমাজে চলতে আর অসুবিধে কোথায়! এখন এসব দেখলে চুপ করে ভাবি শুধু “মানুষটা কত অসহায়। কতটা অপ্রাপ্তি থেকে হিংসে করছে”! অথচ সেই মানুষগুলো কেমন হাসিমুখে আমার পিঠ চাপড়ে বলে ” কী রে ভালো আছিস তো বন্ধু?” আর আমি হেসে উত্তর দিই “বেশ আছি, সুখে আছি।”
ধীরে ধীরে নিজের সাথে একাত্ম হতে শুরু করি। অনেক গল্প হয় আড্ডা হয় আলোচনাও হয়। ভালো লাগে। কাজের মধ্যে তৃপ্তি মেলে যা আর কোনো কিছুতেই পাই না। অদ্ভুত সুখ। এখন মনে হয় কঠিন সময়ে বুক পেতে থাকাই ভালো। ঈশ্বর সব কেড়ে নিলেও ফিরিয়ে দেন অনেককিছু। শুধু অপেক্ষা করতে হয়। আর মায়ের ওই কথাটা:
“যা কিছু ভালো তা এই জন্মেই পেয়ে যাবি। আর যা খারাপ সেটাও এই জন্মেই ভোগ করতে হবে”!
আমার একটা গোটা জন্মে খারাপের পাল্লার চেয়ে ভালোর পাল্লা অনেক ভারী। মানুষের ভালোবাসা যত্ন আদর যা না-চাইতেই আমি পেয়েছি অনেক। শুধু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা যেন সবসময় আলোয় থাকতে পারি। অন্ধকারেও যেন আলোর সন্ধান পাই।
-© বীথি কর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *